Monday, May 13, 2024
Google search engine
Homeধর্মপানি আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

পানি আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো- পানি। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে পানির অস্তিত্ব বিদ্যমান। পানি ছাড়া পৃথিবীতে কোনো প্রাণীসত্তা টিকে থাকা অসম্ভব। পবিত্র কোরআনে পানিকে সব জীবের উৎস বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী একসঙ্গে মিলিত ছিল; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিয়েছি এবং প্রত্যেকটি সজীব বস্তুকে পানি হতে সৃষ্টি করেছি; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?’ -সুরা আম্বিয়া : ৩০

আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর আগে কোরআন মাজিদের এই ঘোষণার পর যখন অনুবীক্ষণযন্ত্র উদ্ভাবিত হলো, তখন বিজ্ঞানীরা তা ব্যবহার করে সাইটোপ্লাজম আবিষ্কার করে এবং দেখতে পায় যে, এর শতকরা ৮০ ভাগই পানি দ্বারা গঠিত। পানি সম্পর্কিত এ রকম আরও অনেক তথ্য দ্বাদশ শতাব্দীর আগে মানবজাতির কাছে অজানা ছিলো- যার বর্ণনা কোরআন মাজিদ বহু আগেই দিয়েছে।

সাগর-মহাসাগরের পানি পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং সামুদ্রিক জীবসমূহকে টিকিয়ে রাখে। সমুদ্রের ঠাণ্ডা ও গরম স্রোতের সমন্বয় ও সূর্য থেকে আলো ও শক্তি শুষে নিয়ে সামুদ্রিক প্রাণীকুলকে বাঁচিয়ে রাখা- এসবই পানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

বিজ্ঞানীরা বলেন, পানিকে এমন কিছু গঠনগত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে, যা অন্যকোনো তরল-অতরল পদার্থকে দেওয়া হয়নি। এতে করে পানির মধ্যে সঞ্চার হয়েছে জীবনীশক্তি। পৃথিবীতে বিচরণশীল ও স্থিতিশীল সব প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পানি ছাড়া মানুষের জীবনধারণ অসম্ভব। আল্লাহতায়ালা পানিকে মানুষের জন্য নেয়ামত হিসেবে দান করেছেন।

কেননা পৃথিবীর সব প্রাণের উৎস পানি এবং সবাই পানির ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহতায়ালা পানিকে শুধুমাত্র মানুষের পান করার চাহিদা মেটানোর জন্যই তৈরি করেননি। পানিকে করেছেন সৃষ্টির বিভিন্ন কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। পানির ওপর জীবন-জগতের সীমাহীন নির্ভরতার কারণেই ইসলাম পানিকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তা রক্ষা মানবজাতিকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।

সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তিনটি বিষয়ে পরস্পরের অংশীদার। পানি, ঘাস (বাণিজ্যিক ও মালিকানাধীন ভূমিতে নয় এমন) ও আগুন।’ -ইবনে মাজাহ

আল্লাহতায়ালা বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব তুলে ধরে বলেছেন, ‘তোমরা যে পানি পান করো, তা সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আনো, না আমি বর্ষণ করি? আমি চাইলে তা নোনা করে দিতে পারি, এর পরও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না?’ -সুরা ওয়াকিয়া : ৬৮-৭০

কোরআনের ব্যাখ্যাকাররা বলেছেন, এই আয়াতে ‘কৃতজ্ঞতা প্রকাশ’-এর উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ ও অমূল্য সম্পদ পানির অপচয় রোধ করা এবং তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। আর নোনা করে দেওয়ার অর্থ ব্যবহার অযোগ্য হওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও ও পান করো। কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ -সুরা আরাফ : ৩১

কোরআন মাজিদের এসব আয়াত ও অনুরূপ হাদিসের উদ্দেশ্য হলো, বৈশ্বিক সম্পদ পানি ও তাতে বিশ্ববাসীর অধিকার রক্ষা করা। এ জন্য আধুনিক যুগের ফকিহরা বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে মত দিয়েছেন। পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী দিনের ভয়াবহ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদের পানির স্রোতধারা সরবরাহ করবে?’ -সুরা মুলক : ৩০

কিন্তু কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা উপেক্ষা এবং বৈশ্বিক সম্পদ পানির সুষ্ঠু বণ্টন ও রক্ষায় উপযুক্ত উদ্যোগ না থাকায় পৃথিবীতে এরই মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট তৈরি হয়েছে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের দাবি, আগামী দিনে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহই হবে পৃথিবীর অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments