শিক্ষা

ইউরোপে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান

ইউরোপে তিন কোটি কর্মী স্বল্পতার জায়গা নিজেদের করে নিতে দেশের গ্র্যাজুয়েট ও দক্ষ কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষান্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। এছাড়া বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কর্মী কাজ করছেন, তাদের বিপরীতে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সপ্তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবীতে এখন দক্ষ, যোগ্য ও শিক্ষিত কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। সেটা হোয়াইট কালার হোক বা ব্লু কালার হোক। সমগ্র বিশ্বের শ্রমবাজার আমাদের জন্য উন্মুক্ত। আমরা বিদেশিদের দেখি, বিভিন্ন ভাষা শিখে যোগ্যতা অর্জন করে— তাদের তরুণ প্রজন্ম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে ডেমোগ্রাফিক ডিবিডেন্ট যেটা আমরা বলছি— জনমিতির সুযোগ-সুবিধা যেটা বলছি, সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষতা অর্জন এবং বিশ্ব নাগরিক হওয়ার মূল্যবোধ অর্জন করে, বিশ্ববাজারে নিজেদের নিয়োজিত করার মানসিকতা অবশ্যই রাখতে হবে। পৃথিবীর নানান দেশে নানান ধরনের কর্মসৃজন হচ্ছে। কিছু দিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলো, তাদের তিন মিলিয়ন (তিন কোটি) দক্ষ কর্মী যেমন- প্রকৌশল, ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে নানান জায়গায় তাদের কর্মী স্বল্পতা তৈরি হয়েছে। এই জায়গাগুলোতে আমাদের সন্তানরা ভাষা শিখে, দক্ষ হয়ে অবশ্যই জায়গা করে নিতে পারবে। আমাদেরও সে দক্ষতা আছে। আমরা যদি শুধু নিজ দেশের দিকে দেখি— অনেক বিদেশি এখানে কাজ করছেন। তাদের জায়গাও আমাদের পক্ষে নেওয়া সহজ হবে, যদি আমরা প্রফেশনাল এডুকেশনের দিকে জোর দেই। অ্যাকাডেমিক এডুকেশন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেটি একটি প্রাথমিক ধাপ, কিন্তু প্রফেশনাল এডুকেশনেরর দিকে পিছিয়ে থাকলে চলবে না। প্রফেশনাল এডুকেশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক যে সব সনদ অ্যক্রিডিটেট কোর্স, সেগুলো আমরা করতে পারবো ‘

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যম ব্যবহার নয়, এগুলোকে ব্যবহার করে দক্ষতা, জ্ঞান ও প্রফেশনাল এডুকেশন করতে পারি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই সীমাবদ্ধতা হচ্ছে— উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রফেশনাল এডুকেশন দেওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। ব্যক্তি পর্যায়ে যদি আমরা উদ্যোগী হই, তাহলেই উচ্চশিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত হবো। শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক এডুকেশন দিয়ে আমাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। কর্মসংস্থান দেশে এবং বিদেশে অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে।’

শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ তৈরির আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নারী-পুরুষের সমান অধিকারের ক্ষেত্রে যদি আমাদের সাম্প্রদায়িকতা থাকে, কুপমণ্ডুকতা থাকে, সেই মানসিকতার যদি হই— তাহলে আমরা বিশ্ব নাগরিক হতে পারবো না। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবো। স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা আনস্মার্ট চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো না। আমাদের অসাম্প্রদায়িক অন্ধ মানসিকতা দূর করতে হবে। অন্যের ধর্মবিশ্বাস, অন্যের পোশাক-আশাক নিয়ে যদি মন্তব্য করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়, কাউকে নিচু করে দেখার মানসিকতা তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে যাবো। আমরা দেখছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রবণতার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে অনেক সংকীর্ণ মানসিকতার ব্যক্তিরা তাদের হীনমন্যতা প্রকাশ করছে। উচ্চশিক্ষিত একজন নারীর প্রোফাইলে গিয়ে তার পোশাক-আশাক নিয়ে মন্তব্য করছে, তার চলন কেমন হতে পারে— সেভাবে নছিহত করা উপদেশ দেওয়া, আজে-বাজে মন্তব্য করা, সেগুলো আমাদের অনেকে করছে। তাহলে উচ্চশিক্ষা কি আমাদের উচ্চ মানসিকতা দিতে পেরেছে? সেই প্রশ্ন সবাইকে রাখতে হবে। বিশেষ করে এই প্রজন্মকে। নিজের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ যেভাবে ধারণ করবো, পরমতসহিষ্ণুতায় অপরকে সম্মান করা, শ্রদ্ধা করা শিখতে হবে। তা না হলে আমরা বিশ্ব নাগরিক হতে পারবো না।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইমেরিটাস এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ইউআইইউ’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা, ইউআইইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম মিয়া এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৩ হাজার ৯৫৪ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি এবং কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ৪ জন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button