নতুন ‘হাইভোল্টেজ’ ডার্বিতে সিরিজে চোখ বাংলাদেশের
খেলাধুলা ডেস্ক: আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টাকে কেউ কখনো স্বীকৃতি দেননি। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার এই দ্বৈরথটার একটা অনানুষ্ঠানিক নাম আছে, ‘নাগিন ডার্বি’। সেই ডার্বিতে নতুন অধ্যায় যোগ হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আরও একটা বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ শুরু হয়ে যাচ্ছে কাল সন্ধ্যা ৬টায়। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে নিজেদের গায়ে আন্ডারডগের তকমা এঁটে বসলেও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত চোখ রাখছেন সিরিজ জয়েই।
ডার্বির বিষয়টাকে এখন আবারও টেনে আনার কারণ দুই দলের সবশেষ লড়াই। বিশ্বকাপের ম্যাচে সেদিন বিরাট এক কাণ্ডই ঘটে গিয়েছিল। ক্রিকেটের ১৪৬ বছরের ইতিহাসে যা হয়নি, তাই হয়েছিল সেদিন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টাইমড আউট হতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে। এরপর এ নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বেশ। ম্যাথিউস তো বলেই ফেলেছিলেন, ‘দলটা বাংলাদেশ বলেই এমনটা হলো, অন্য কেউ এমন কিছু মোটেও করত না।’
কেন বাংলাদেশই করতে যাবে? কারণ লুকিয়ে আছে অতীতে, ওই ডার্বি শব্দটায়। ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে যার সূত্রপাত। নাজমুল হোসেন অপু তার ট্রেডমার্ক নাগিন উদযাপনটা বহু আগে থেকেই করতেন। সেই টুর্নামেন্টেও করলেন। তবে সেটা শ্রীলঙ্কা ভালো চোখে নিল না। বাংলাদেশের ব্যাটার আউট হলেও সে উদযাপনটা করে ‘জবাব’ দিল লঙ্কান দল।
সে ম্যাচটা ছিল আবার বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার একটা ম্যাচ। টি-টোয়েন্টিতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড হয়েছিল সেদিন। ম্যাচটা শেষ করে ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহিম তেড়েফুঁড়ে গিয়ে ‘নাগিন’ বনে করলেন উদযাপন।
পরের ম্যাচে আরও একদফা উত্তাপ ছড়াল আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। সে সিদ্ধান্তে নাখোশ হয়ে সাকিব আল হাসান তো আরেকটু হলে দলকেই তুলে আনছিলেন মাঠ থেকে!
এরপর থেকে দুই দলের লড়াইয়ে সে উত্তাপটা কম বেশি টের পাওয়া গেছে বেশ। বিশ্বকাপের ওই ম্যাচ সে নিভু নিভু আগুনটায় ঘি ঢেলেছে রীতিমতো। সেই ম্যাচের পর দুই দল প্রথম বারের মতো যখন মুখোমুখি, তখন আবারও আলোচনায় দুই দলের এই দ্বৈরথ।
সংবাদ সম্মেলনে হাজির দুই দলের দুই প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন শান্ত ও লঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউডের কাছে ধেয়ে গেল এ বিষয়ক প্রশ্নের বাউন্সার। দুজনেই অবশ্য সেটা ডাক করে গেলেন সুনিপুণ দক্ষতায়। সিলভারউড বললেন, ‘দেখুন অতীতে যা হয়েছে, হয়ে গেছে। এখন আমি চাইছি একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ হোক। আগে যা হয়েছে, ওসব ইতিহাস, ওসব এখন আর নেই।’
একই কথা বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্তও বললেন। তবে দুজনের সুর বদলে গেল একটা জায়গায় এসে। কে ফেভারিট এই প্রশ্নে। লঙ্কান কোচ নিজেদের ফেভারিট দাবি করলেন। বললেন, ‘আমি তো বলব শ্রীলঙ্কাই ফেভারিট। তবে যা বললাম, দুই দলই খুব ভালো। সিরিজ জেতা তাই অনেক কঠিন হবে। আমরা সেরা ক্রিকেট খেলতে চাই।’
শান্ত ফেভারিটের বিষয়টা না টানলেও জানালেন সিরিজ থেকে তার প্রত্যাশা। বললেন, ‘এত বড় একটা টুর্নামেন্ট শেষ করে আমরা টি-টোয়েন্টি দিয়েই শুরু করছি, সবাই ভালো টাচে আছে। পরিকল্পনা করাটা সবার জন্যেই খুব সহজ হবে। কারণ এই ফরম্যাটটাই খেলে আসছি। সিরিজ জেতার জন্য অবশ্যই শতভাগ বিশ্বাস আছে।’
তবে দুই দলই সিরিজটা শুরু করছে ‘অভাব’ নিয়ে। দুই দলের দুই বড় তারকা অন্তত প্রথম দুই ম্যাচে নেই। শ্রীলঙ্কা নিষেধাজ্ঞার কারণে অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গাকে পাচ্ছে না এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে। বাংলাদেশ অবশ্য সাকিব আল হাসানকে পুরো সিরিজেই পাচ্ছে না। চোখের সমস্যার কারণে এই সিরিজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সাকিব।
বিশ্বকাপ চলে এসেছে দুয়ারে। আর মাস তিনেক পরই শুরু হবে টি-টোয়েন্টির বিশ্বআসর। সেই বিশ্বকাপও নজরে থাকবে দুই দলের, তার আগে যে গুছিয়ে নেওয়ার সময় খুব একটা নেই!
দল গুছিয়ে নেওয়ায় চোখ থাকলেও সম্মুখ সমরে ছাড় দেওয়া চলবে না একটুও। ‘ডার্বি’তে জিতে বড়াইয়ের অধিকার হারাতে কে চায়?