জাতীয়ফিচার

ফাগুনের আগমন বার্তা, মুকুলে সেজেছে প্রকৃতি

ফাগুনে নবরূপে সেজেছে প্রকৃতি। শীতের শুষ্ক পোশাক খুলে আড়মোড়া ভেঙে ওঠেছে। মৃদু বাতাসে নববধূর মতো লজ্জায় অবনত লজ্জাবতী। ভোরের সূর্য জানালায় উঁকি মারতেই, নানাপাখির কিচির-মিচির ধ্বনি আলোড়ন তোলে। ঘুম-ঘোমটা খুলে ফুটে ওঠে রঙ-বেরঙের ফুল। কারুচিত্র-ছাপা পাখায় নিয়ে বাগানে ঘুরে বেড়ায় রঙধনুর চেয়েও বৈচিত্র্যময় রঙের প্রজাপতিরা। সঙ্গে আসে অন্য পতঙ্গ বন্ধুরাও। বসন্তের বাসন্তী সাজে সেজেছে পলাশ, শিমুল, অশোক, রক্তকাঞ্চন, নাগেশ্বর, মহুয়া, মণিমালা।

বসন্তের দুই মাস শেষ হতেই মধু মাস। গাছে গাছে নতুনের আভাস, নতুন বার্তা। কবি গুরুর ভাষায়-” দলে দলে আসে আমের মুকুল/বনে বনে দেয় সাড়া ।”

হ্যাঁ, বসন্তেই ঘটে মধুমাসের আগমন বার্তা। তাই তো ফুটছে আমসহ নানা ফলের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ। কিছু কিছু গাছে তো ফলের কুড়িও দেখা দিয়েছে।

বাংলা দিনপঞ্জিকা মতে, বছরের শেষ দুই মাসের যুগলবন্দীতে সেজে ওঠে ঋতুরাজ। সময়ের আবর্তনে এর সাথেই ঋতুচক্র পূর্ণ হয়ে আবার শুরু হতে চলেছে গ্রীষ্মকাল। পিঠাপিঠি দুই ঋতুতে যেন প্রকৃতির ভিন্ন দুই রূপ, দু’হাত ভরে আশির্বাদ করেন। বসন্তে যেমন ফুলের সমাবেশ, তেমনি এরপরই গ্রীষ্ম তার নানারকমের সুস্বাদু ফলের বিশেষত্ব নিয়ে হাজির হয়।

রসে টসটসা, তাজা মৌসুমী ফলগুলো হয় পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, মুকুল- সহ নানান ফলে ভরে যায় গ্রীষ্মের গাছগুলো।

আর তারই পূর্ব প্রক্রিয়া চলছে এখন। একটু নজর দিলেই দেখা যায়, ব্যস্ত প্রকৃতি মেতে উঠেছে মুকুলের পরিবর্তনের আন্দোলনে। সেইসব ফলের গাছের ডালগুলো যেন ইতোমধ্যেই হাজারো মুকুলের কারণে নুয়ে পড়ছে। আম বা জাম গাছের নিচে দাঁড়ালেই বাতাসে ভেসে আসা মুকুলের সুগন্ধ, গ্রীষ্মে প্রকট হওয়ার অগ্রিম বার্তা জানায়।

এদিকে, প্রজাপতি, পাখি, কীটপতঙ্গরা ফুল গাছেই শুধু বিচরণ করে না। ফলের গাছেও উড়ে বেড়ায় নানা জাতের পতঙ্গরা। লেজ তুলে লাফিয়ে বেড়ানো ফড়িং, দল বেঁধে জীবন সন্ধানে ছোটা মৌমাছি দল বা সুরেলা কণ্ঠের প্রাণী-পাখিরা। সদ্য ফোটা ফুলেদের সঙ্গে তাদের যত কথোপকথন!

মুকুলে মুকুলে ঘুরে তারা এক গাছের রেণু গোচরে বা অগোচরেই পৌঁছে দিচ্ছে অন্য ঠিকানায়। ফলের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক ধাপ এটি। গাছ থেকে গাছে রেণু পরিবহনের কাজ ঘটে এভাবেই। আর তাতেই উৎকৃষ্ট জাত ও মানের ফল উৎপাদন হয়। যত বেশি মুকুলের রেণু স্থানান্তরিত হবে তত বেশিই ভালো। ফুলের রেণু ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসও। বয়ে নিয়ে চলে নতুন মুকুলের পানে। এইভাবেই প্রকৃতি নিজ চক্র অবিরত চালিয়ে যাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button