খেলাধুলাজাতীয়

লিটনের সর্বনাশে কপাল খুলছে কার?

ফর্মে নেই লিটন দাস। ঘরের মাঠে শ্রীলংকার বিপক্ষে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন তিনি। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে রানের খাতা খুলতে পারেননি। তার আগেই ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। এর ফলাফলও তার জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডের দল থেকে বাদ পড়েছেন এ টাইগার ওপেনার।

বাজে ফর্মের কারণে এর আগেও দল থেকে বাদ পড়েছিলেন লিটন। তবে সিরিজের মাঝপথে বাদ পড়া লিটনের জন্য নতুন অভিজ্ঞতাই। এমনকি নতুন নির্বাচক প্যানেলের কাছ থেকে পাওয়া আচরণও।

শনিবার দল থেকে বাদ পড়ার ঘোষণা আসার পরপরেই চট্টগ্রামের টিম হোটেল ছেড়েছেন লিটন। এর আগে অবশ্য প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন তাকে জানিয়েছেন, কেন তাকে শেষ ওয়ানডে দলে রাখা হয়নি। লিটনকে বাদ দিয়ে বিবৃতিতে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘সাদা বলে লিটনের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ভিডিওবার্তায় প্রধান নির্বাচক আবার বলেন, ‘যেহেতু সিরিজ চলছে, পরিবর্তনের খুব বেশি সুযোগ ছিল না। তবে নতুন বলে খুবই অধারাবাহিক হওয়ার কারণে আমরা লিটন দাসকে এই স্কোয়াডের সাথে আর রাখছি না।’

এদিকে লিটনকে বাদ দিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাকা হয়েছে তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলী অনিককে। মূলত দলের মিডল অর্ডারে ভারসাম্য আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

চলমান ওয়ানডে সিরিজের দলে আগে থেকেই বিকল্প ওপেনার থাকাই আরেকজন উদ্বোধনী ব্যাটারকে নেয়ার প্রয়োজন দেখেনি নির্বাচক কমিটি। গাজী আশরাফের কথায়, ‘দলে আগে থেকে এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিম রয়েছে, যারা ওপেন করতে পারে। আরেকজন ওপেনার আছে সৌম্য সরকার। লিটনকে যখন স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করলাম না, তখন এই জায়গায় নতুন করে কোনো ওপেনারের প্রয়োজন দেখিনি।’

সিরিজের মাঝপথে লিটনের বাদ পড়া মানসিক ধাক্কা হলেও নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত যৌক্তিকই মনে হয়েছে ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে। দেশের এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘দলে বিকল্প ওপেনার আছে। সেদিক থাকে লিটনকে স্কোয়াডের সঙ্গে রাখা যেত। তবে যেটা হয়েছে, এটা তাকে ডিমোটিভেট করতে পারে। তবে সবমিলিয়ে নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত যৌক্তিকই মনে হয়েছে।’

শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে গোল্ডেন ডাক ও দ্বিতীয় ম্যাচে তিন বল খেলে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন। এই দুই ইনিংস মিলিয়ে নিজের সবশেষ ১০ ওয়ানডেতে অর্ধশতকের দেখায় পাননি। এমনকি গত বছরের শেষ মুহূর্তে নিউজিল্যান্ড সফরেও তিন ম্যাচে (২২, ৬ ও ১*) ব্যাট হাতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতেও ব্যর্থ হয়েছেন এ ব্যাটার।

নিজের ক্যারিয়ারে লিটন সবশেষ ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন ত্রয়োদশ ওয়ানডে বিশ্বকাপে, ভারতের বিপক্ষে। পুনেতে ৮২ বলে খেলেছিলেন ৬৬ রানের ইনিংস। এটি সাজানো ছিল ৭টি চারে। এরপর থেকেই ব্যাট হাতে রান খরায় ভুগছেন তিনি। হোম ও অ্যাওয়ে সিরিজে ব্যাট হাতে প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থই হয়েছেন এ টাইগার ওপেনার। যার সবশেষ উদাহরণ ঘরের মাঠে শ্রীলংকা সিরিজ।

এখন লিটনের বিকল্প হিসেবে যাকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেই জাকের আলীর সিনিয়র পর্যায়ে অভিষেকই হয়নি। তবে টি-২০ সংস্করণের অভিষেকেই নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে খেলেছিলেন ৬৮ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। যদিও পরের ম্যাচটি দুই অঙ্কের ঘর পেরোতে পারেননি।

ডিপিএলে আবাহনীরে হয়ে অবশ্য দুটি ম্যাচেই রানের দেখা পেয়েছেন জাকের। একটি থিতু হয়েও ২১ রানে থেমেছেন। অন্যটিতে ৭৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। এদিন তার দলও গাজী টায়ার্সের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে।

চলমান সিরিজে দলের সঙ্গে আগে থেকেই সঙ্গ দেওয়া বাকি দুজন ওপেনারের একজন অভিজ্ঞ এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিম। ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে লম্বা সময় ধরে দলের সঙ্গে সফর করছেন বিজয়। তবে কালেভদ্রে ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলছে এ ওপেনারের।

গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে ওপেন করে বিজয়। তিন ম্যাচের দুটিতেই ভালো শুরুর পর সাজঘরে ফেরেন, বাকি একটিতে দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৪৩, দ্বিতীয়টিতে ২ এবং শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এরপর বিপিএলে মনোবিশেষ করেন।

এদিকে সবশেষ এশিয়া কাপে জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হয় তানজিদ হাসান তামিমের। তবে অভিষেক ম্যাচ রাঙাতে ব্যর্থ হন তিনি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটের শুরুটা শূন্য রানেই শেষ হয় তার। এরপর ধারাবাহিকভাবে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপে একটানা ম্যাচ খেলেন বাঁহাতি এ ওপেনার।

ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচে ওপেনিং করেছেন তামিম। যেখানে ১৩.৭৬ গড়ে ৯৭.৮১ স্ট্রাইক রেটে ১৭৯ রান করেছেন তিনি। সেইসঙ্গে একটি মাত্র ফিফটি রয়েছে তার ঝুলিতে। বিশ্বকাপে নিজেকে প্রমাণ করতে না পাড়ায় অবশ্য নিউজিল্যান্ড সফরে ছিলেন না অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এ ক্রিকেটার।

অনেকেরই ধারণা, কম্বিনেশনের কারণে সুযোগ পেতে পারেন বিজয়। যেহেতু লিটন ডানহাতি ব্যাটার ছিলেন। আবার ওপেনিংয়ে সৌম্যও নিজেকে মেলে ধরেছেন। কেউ কেউ আবার তরুণ তামিমেই সওয়ার হওয়ার কথা বলছেন। চট্টগ্রামে অঘোষিত ফাইনালে লিটনের শূন্যস্থান পূরণে অভিজ্ঞ বিজয় নাকি তরুণ তানজিদ তামিমের ওপর ভরসা রাখবে টিম ম্যানেজমেন্ট, এখন সেটিই দেখার বিষয়।

সোমবার চট্টগ্রামে সকাল ১০টায় শুরু হবে দুই দলের ওয়ানডে সিরিজ নির্ধারণী লড়াই। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে জিতে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ উইকেটে জিতে সিরিজে সমতা টানে সফরকারী শ্রীলংকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button