শেরপুরে গম চাষে আগ্রহ কমছে কৃষকদের। এ কারণে জেলায় এবার গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কৃষকরা বলছেন, ফলন ভালো না হওয়া এবং বাজারে গমের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অন্য ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছেন তারা। এদিকে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রাখতে প্রণোদনা হিসেবে আগামীতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) হুমায়ুন কবীর বলেন, জেলার সদর উপজেলাসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে এক হাজার ৪২ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৯৬২হেক্টর জমিতে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় এবার গম চাষ কম হয়েছে।
শ্রীবরদীর রানীশিমুল গ্রামের কৃষক ফজলু শেখ, হাসান আলী তরফদার এবং কাজল মিয়া বলেন, ফলন ভালো না হওয়া, বাজারে গমের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং সরকার নির্ধারিত দরে ফসল বিক্রি না হওয়ার কারণে গম আবাদ করে আগের মতো লাভ হয় না। তাই তারা অন্য লাভজনক ফসল আবাদের দিকে ঝুঁকছেন।
ঝিনাইগাতীর গান্ধিগাঁও গ্রামের সজল মিয়া, কৃষক মোহাব্বত আলী, শালচূড়া গ্রামের দুদু মন্ডল ও কৃষক আইয়ুব আলী ফর্সা বলেন, ভুট্টা চাষে খরচ কম। তাই গমের পরিবর্তে ভুট্টা চাষ লাভজনক। এছাড়া গমক্ষেতে রোগ-বালাই বেশি হয়। তাই গম আবাদে আগ্রহ কমছে তাদের।
হলদি গ্রামের কৃষক শাহজাহান মিয়া বলেন, পাহাড়ি অঞ্চলে অন্য ফসলের চেয়ে গম চাষে লাভ অনেক কম। গম আবাদ করতে বেশি খরচ হয়। শ্রমিকরাও গমক্ষেতে কাজ করতে চায় না। বছর কয়েক আগেও বিঘার পর বিঘা জমিতে গম চাষ হয়েছে। এ বছর গমের চাষ করলেও ফলন ভালো হবে।
ঝিনাইগাতীর কুশাইকুড়া গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, গমের স্থলে লাভজনক ফসল ভুট্টা ও আলুসহ নানা জাতের সবজি চাষাবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা। তবে ফলন ভালো হলে এবং বাজারে গমের ভালো দাম পাওয়া গেলে কৃষকরা হয়তো আগামী বছর গম চাষে ফিরে আসতে পারেন।
ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার দায়িত্বে থাকা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, ঝিনাইগাতীতে ১০৪ হেক্টর ও শ্রীবরদীতে ১৫৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।
ঝিনাইগাতীর ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, বর্তমানে দেশে শীতকাল স্বল্পকালীন হওয়ায় গমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া গমক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রুব বেশি হয়। অন্যদিকে স্বল্প শ্রমিক ও অল্প সেচে ভুট্টা চাষ অত্যন্ত লাভজনক হয়ে উঠায় হয়তোবা গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাশ বলেন, জেলায় ভুট্টা এবং বোরো ধান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠায় কৃষকরা গমের আবাদ কম করছেন। গম আবাদে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা হিসেবে আগামীতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হবে।