বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি) আইসিসির আম্পায়ারিংয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নারী আম্পায়ার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন নওগাঁর মেয়ে ডলি রানি সরকার।
সফলতার এই পর্যায়ে আসার পেছনে রয়েছে এক সংগ্রামী জীবনের অজানা গল্প। বরেন্দ্র ভূমিখ্যাত নওগাঁ শহরের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম ডলি রানির। ছোটবেলা থেকেই পাড়ার ক্রিকেটে ছেলেদের সঙ্গে খেলতেন তিনি। সেখানেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি তার। এরপরে ভর্তি হয়ে যান বিকেএসপিতে। জাতীয় দলের ২০ জনের ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলেন, কিন্তু থামতে হয়েছে সেখানেই পড়ে বিকেএসপিতেই চাকরি হয়ে যাওয়ায় ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা আর এগোয়নি। সেই ডলি রানি সরকারই এখন আম্পায়ারিং হাল ধরে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে।
নওগাঁ স্টেডিয়ামে ডলি রানি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা করতাম। স্কুলে খেলতাম হ্যান্ডবল, ভলিবল, অ্যাথলেটিকে যে খেলাগুলো আছে ইভেন্টগুলোতে সবগুলোতে আবার পাড়ার সব বড় ভাইদের সঙ্গে খেলতাম। শুরুটা আমার পাড়ার বড় ভাইদের হাত ধরেই। শুরুটা আমার পক্ষে খুব কঠিন ছিল যদি না নওগাঁ জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং পাড়ার বড় ভাই, ছোট ভাই এবং প্রতিবেশী কাকারা তারাই পাড়ায় যে সকল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হইতো সেখানে আমাকে খেলতে নিয়ে যেত ঐখান থেকে আমি তৈরি হইছি। ওনারা যদি হেল্প না করতো তাহলে এতদূর আসতে পারতাম না। আমি জাতীয় দলের ২০ জনের ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলাম, কিন্তু থামতে হয়েছে সেখানেই। পরে বিকেএসপিতেই চাকরি হয়ে যায়, ক্রিকেট ক্যারিয়ারটা আর এগোয়নি।
তিনি আরও বলেন, আইসিসির আম্পায়ারিংয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নারী আম্পায়ার হিসেবে যুক্ত হতে পেরে আমি এতোই খুশি হয়েছি যে প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। আমি অনেক অনেক খুশি এবং আনন্দিত কারণ এত দ্রুত আমি আইসিসি আম্পায়ারিং এ যুক্ত হতে পারবো তা প্রত্যাশা ছিল না। ক্রিকেট বোর্ড আমাদের নিয়ে কাজ করছে দুই বছর হতে চলেছে। গত দুই বছর ক্রিকেট বোর্ড আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ম্যাচ দিয়ে চেষ্টা করেছেন উপযুক্ত করার। আমরা সেই কাজটি করেছি। আজ আইসিসি আম্পায়ারিংয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছি।’
ডলি রানি বলেন, আমি বিকেএসপির ছাত্রী ছিলাম। ২০০৯ সাল থেকেই আম্পায়ারিং প্র্যাক্টিস এর মধ্যে ছিলাম। মেয়েদের ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দিয়ে যাত্রা শুরু করি। এছাড়া বিকেএসপিতে ছেলেদের যে ম্যাচগুলো বিশেষ করে সৌম্য বিজয়রা যখন ছিল ওই সময় ওদের ম্যাচ আম্পায়ার ছিলাম। এছাড়া দেশের বাহিরের অনেক টিম বিকেএসপিতে খেলতে আসতেন যেমন শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান ম্যাচগুলোতে আম্পায়ারিং করতাম।
তিনি আরও বলেন, আমার জন্মস্থান নওগাঁতে, বেড়ে উঠাও নওগাঁতে, খেলা শুরুটাও নওগাঁতে। সবকিছুই নওগাঁ-কেন্দ্রিক। আমার প্রাথমিক স্কুল জীবন চকএনায়েত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিকে নওগাঁ প্যারীমোহন (পিএম) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং খেলাধুলার জন্য আমি নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি, এইচএসসি পাশ করি নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে, গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করি বিকেএসপি থেকে, মাস্টার্স কমপ্লিট করি দেবেন্দ্র কলেজ মানিকগঞ্জ থেকে, বিপিএড কমপ্লিট করি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং এমপিএড কমপ্লিট করি উত্তরা ইউনিভার্সিটি থেকে।