Thursday, May 9, 2024
Google search engine
Homeঅর্থনীতি৫০৬৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করেছে কৃষি ব্যাংক

৫০৬৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করেছে কৃষি ব্যাংক

কৃষি ব্যাংকের ঋণ ও অগ্রিমের ক্ষেত্রে ভয়াবহ গড়মিলের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া ছাড়াও খেলাপি ঋণের তথ্য লুকিয়েছে ব্যাংকটি। ৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা খেলাপি দাবি করলেও কৃষি ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি দ্বিগুণেরও বেশি। ঋণ পুনঃতফসিলে অনিয়ম, সিআইবিতে ঋণের তথ্য না দেওয়াসহ নানা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে ব্যাংকটি। শীর্ষ ব্যবস্থাপকদের দুর্বলতার কারণে শাখা পর্যায় থেকে চাহিদা অনুযায়ী তথ্য পায়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল।

জানা গেছে, কৃষি ব্যাংক ৩ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরির্দশনে দেখা গেছে, ব্যাংকটির প্রকৃত খেলাপি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। ঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রেও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সলিউশন-সিবিএস’র তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করেছে কৃষি ব্যাংক।

শুধু তাই নয়, কৃষি ব্যাংকের মোট ঋণের সংখ্যা ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭৪টি। তবে সিআইবিতে তথ্য আছে, ১৬ লাখ ১৫ হাজার ৬২৮টি। বাকি ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬টি ঋণের কোনো তথ্য নেই সিআইবিএতে। ব্যাংকের কর্মী ঋণেও অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরিদর্শন প্রতিবেদন বলছে, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অদক্ষতায় কৃষি ব্যাংক অভ্যন্তরীণ সুশাসন দুর্বল হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের চরিত্র বদলের পর দুর্বল হয়েছে ব্যাংকটির প্রতিটি সূচক। এছাড়া ঋণের তথ্য গোপন করা বড় ধরনের অপরাধ। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শও তাদের।

বেসরকারি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, বাণিজ্যিক ঋণ দেয়ার সময় কিছু খেলাপি হওয়ার শঙ্কা থাকেই। সেটি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সহনীয়। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান মূলধনের ঘাটতি দেখায় সেইক্ষেত্রে সে ব্যবসার জন্য উপযুক্ত কিনা চিন্তা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এসব তথ্য যত বেশি দেবে স্বচ্ছতা তত বেশি হবে। ব্যাংক কোনোকিছু গোপন করতে পারবে না। গোপন করার বিধানও নেই। তথ্য গোপন করা অগ্রহণযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিভ্রান্তি হলে সেটি ২/৩ বা ৫ শতাংশ হতে পারে। তবে সেটি তো দ্বিগুণ হতে পারে না। তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা কিংবা সরকার কিছুই বলছে না তাদের। ফলে দিনদিন অবস্থা খারাপ হচ্ছে। এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে না আনলে ব্যাংকিং সিস্টেমই ভেঙে পড়বে।

তিনি আরো বলেন, বাণিজ্যিক ঋণগুলোর তথ্য সিআইবিতে কেন যাবে না? এটি তো অবশ্যই যেতে হবে। কিন্তু এসব তথ্য না দিয়েও কীভাবে তারা পার পায় সেটিই বুঝি না।

তবে কৃষি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ ও খেলাপি সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম করেননি তারা। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান বলেন, কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেশি। সে তুলনায় জনবল সঙ্কট রয়েছে। ফলে সঠিক সময়ে সব জায়গায় তথ্যগুলো দেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্যই ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments