চাকরিশিক্ষা

যৌন নিপীড়ন: মাহমুদুর রহমান চাকরিচ্যুত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে নৈতিক স্খলন ও অসদাচরণের অভিযোগে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। রাত ১০টায় সিন্ডিকেট সভা শেষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর মাহমুদুর রহমান জনির সঙ্গে তার নিজ বিভাগের এক নারী প্রভাষকের অন্তরঙ্গ ছবি ফাঁস হয়

একই সঙ্গে বিভাগের শিক্ষক পদে আবেদনকারী এক নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ২৭টি অন্তরঙ্গ কথোপকথন প্রকাশিত হয়। যেখানে মাহমুদুর রহমান জনির বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গর্ভপাত করানোর তথ্য আসে। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ‘সত্যাসত্য যাচাই’ কমিটি গঠিত হয়। কমিটির প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে তোলা হলে প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ হয়নি বলে ‘স্পষ্টিকরণ’ নামে আরেকটি কমিটি করা হয়।

এই কমিটির প্রতিবেদনে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেলে গত বছরের আগস্ট মাসে ‘স্ট্রাকচার্ড’ কমিটি গঠন করা হয়।
মাহমুদুর রহমান জনিকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের পর গঠিত আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।

এ সময় নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলনের পর একটি সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। আমরা চাই আমাদের বাকি যে দাবিগুলো রয়েছে সেগুলোও দ্রুত মেনে নেওয়া হোক।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাঙ্গচিত্র আঁকার অপরাধে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সভাপতি অমর্ত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীকে আগামী এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সিন্ডিকেট সভায়। উক্ত বহিষ্কৃত সময়কালে তারা অ্যাকাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবেন না।

বহিষ্কার হওয়া অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি নতুন কলা ভবনের পশ্চিম পাশে মুরাদ চত্বর সংলগ্ন দেয়ালে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি দেয়ালচিত্র মুছে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনকারীদের একটি অংশ (ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ) নতুন দেয়ালচিত্র অঙ্কন করে। সেখানে ছাত্র ইউনিয়ন ব্যানারে ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’ শীর্ষক একটি বাক্য জুড়ে দেওয়া হয়।

ওই ঘটনার বিচারের দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জড়িতদের শাস্তির দাবিতে শহীদ মিনারে তিন দিন অনশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনাম ও বাংলা বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম। পরবর্তীতে উপাচার্যের আশ্বাসে তারা অনশন ভাঙেন। এ সময় দোষীদের বিচারের আশ্বাস দেন উপাচার্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button