চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে দল পুনর্গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আংশিক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে বিএনপি এ প্রক্রিয়া শুরু করল।
বিগত আন্দোলনে রাজপথে ছাত্রদল বিশেষ করে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘হতাশাজনক’ পারফরম্যান্সে খুবই ক্ষুব্ধ ছিল বিএনপির হাইকমান্ড। তাই আন্দোলনের দুই মাসের মধ্যেই ভেঙে দেওয়া হলো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে পুরো নেতৃত্ব বদলে ফেলার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
এসব সংগঠনে আগামীতে কাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা যায় এবং কমিটির বর্তমান শীর্ষ নেতাদের কোথায় পদায়ন করা হবে, সেগুলো নিয়েও এখন কাজ চলছে দলের মধ্যে। এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলেই পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কমিটিই বিলুপ্ত করে নতুন নেতৃত্বে অঙ্গসংগঠনগুলো সাজানো হবে। দীর্ঘ সময় ধরে চলবে এ প্রক্রিয়া।
সূত্রের দাবি, বিএনপির অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হলে মূল দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হতে পারে। নতুন লোক দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে।
স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় ১৩০টি পদ এখন শূন্য। তবে অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনের মধ্যেও এ প্রক্রিয়া চলতে পারে।
জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুটি শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় দলের কয়েকটি বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আনা হতে পারে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে বিএনপি বছরের অধিক সময় ধরে রাজপথে আন্দোলন করলেও চূড়ান্ত সফলতা আসেনি। বিএনপির বর্জন ও আন্দোলনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এমন অবস্থায় নির্বাচনের পরই আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে নামে বিএনপির হাইকমান্ড।
দলের মূল্যায়নে উঠে আসে, ছাত্রদলসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে কার্যকর ও প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখায় নির্বাচনের আগে চলমান আন্দোলনে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি। এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে নিষ্ক্রিয় সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড।
এরই অংশ হিসেবে আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনে ব্যর্থতায় বিএনপির সাংগঠনিক অ্যাকশন শুরু হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
গত ১ মার্চ শুক্রবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি ও নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্যের আংশিক কমিটি অনুমোদন দিয়েছে বিএনপি। বিকেলে দলীয় প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।