রমজান সামনে রেখে বাজারে বাড়ছে চিনির চাহিদা। এ সময় বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চিনি আমদানির শুল্কও কমিয়েছিল সরকার। কিন্তু এর মধ্যেই চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানার গুদামে লাগলো আগুন। ভয়াবহ আগুনের পর থেকে বন্ধ রয়েছে কারখানাটি। বন্ধ চিনি সরবরাহও।
আগুনের প্রভাব চিনির বাজারে পড়বে না- শুরু থেকে এস আলমের পক্ষ থেকে এমনটি জানানো হলেও মঙ্গলবার চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এক রাতেই পাইকারিতে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে গেছে চিনির দাম। ক্রেতাদের মতে- অসাধু কারবার। আড়তদাররা বলছেন- এস আলমের চিনি সরবরাহ শুরু হলে নিয়ন্ত্রণে আসবে বাজার।
জানা গেছে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টনের মতো। এর মধ্যে এক লাখ টনের জোগান আসে দেশের উৎপাদন থেকে। বাকিটা হয় আমদানি। বিভিন্ন শিল্পগ্রুপ অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে তা পরিশোধনের পর বাজারে ছাড়ে।
দিনে গড়ে পাঁচ হাজার টন পরিশোধনের সক্ষমতা নিয়ে দেশে চিনি পরিশোধনে শীর্ষে রয়েছে সিটি গ্রুপ। দিনে আড়াই হাজার টনের সক্ষমতা নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এস আলম গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে এস আলম গ্রুপের চিনির চাহিদা বেশি। ফলে আগুন লাগার ঘটনাকে পুঁজি করে সুযোগ নিতে মরিয়া অসাধু ব্যবসায়ীরা- বলছেন কেউ কেউ।
আগুনের উত্তাপ ছড়াবে না বাজারে
গুদামে লাগা আগুনের প্রভাব চিনির বাজারে পড়বে না বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক আখতার হোসেন।
তিনি বলেন, আমাদের পরিশোধন কারখানায় কোনো ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে চিনি রাখার একটি গুদামে এবং কনভেয়ার বেল্টে, যেই বেল্টটি দিয়ে গুদাম থেকে চিনি কারখানায় নেয়া হয়। ইতোমধ্যে গ্রুপ চেয়ারম্যান স্যারসহ আমরা সবাই কারখানা পরিদর্শন করেছি। কারখানা পুনরায় উৎপাদনে যেতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর উৎপাদনে গেলে সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে গুদামে অপরিশোধিত আরো আড়াই লাখ টন চিনি রয়েছে। পাশাপাশি পাইপলাইনে আছে ছয় লাখ ৪১ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি। ফলে বাজারে সরবরাহ সংকটের কোনো কারণ নেই।
আগুন লাগতেই উত্তাপ খাতুনগঞ্জে
গুদামে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে।
জানা গেছে, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই আড়তে কেজিতে এক টাকা বেড়ে গেছে চিনির দাম। মঙ্গলবার সকাল হতে থেকে যা গড়ায় দুই থেকে তিন টাকায়। সোমবার সকালে এস আলমের চিনি বিক্রি হয়েছিল মণপ্রতি চার হাজার ৯৩০ টাকায়। আগুন লাগার পর রাতে সেটি ৬০ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৯৯০ টাকায়। আর পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্রি হয় পাঁচ হাজার ৫০ টাকায়। অর্থাৎ, একদিনেরও কম সময়ের ব্যবধানে মণপ্রতি চিনির দাম বেড়ে যায় ১২০ টাকা। যা কেজিতে তিন টাকা।
বাজারে মণপ্রতি ৩০ টাকা করে বেড়েছে অন্যান্য গ্রুপের চিনির দামও। তবে এস আলম গ্রুপের চিনি সরবরাহ শুরু হলে বাজার আগের দরে ফিরবে বলে মনে করছেন আড়তদাররা।
খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, ঢাকার চিনি কিনে গাড়ি ভাড়া দিয়ে আনতে খরচ বেশি পড়ে যায়। তাই চট্টগ্রামে এস আলমের চিনির চাহিদা বেশি। গতকাল আগুন লাগার খবর পেয়ে অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের মতো করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
খাতুনগঞ্জে আসা ক্রেতা মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, আগুন লাগতে না লাগতেই বাজারে চিনির দাম বেড়ে গেছে। বাজারে থাকা চিনি তো আগের মজুদ করা, তাহলে সেই চিনির দাম বাড়ানোর যুক্তি কি? অসাধু ব্যবসায়ীরা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সুযোগ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি।
উত্তাপ ছড়িয়েছে খুচরায়ও
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রমজানে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে প্যাকেট চিনির সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ঢাকার মিলগুলো। ফলে খুচরা পর্যায়ে প্যাকেটজাত চিনিও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
মেসার্স এএম এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল হক লিটন জানান, পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার প্রভাব খুচরা পর্যায়েও পড়তে শুরু করেছে।
নজরদারি করছে প্রশাসন
আগুন লাগার কারণে দেশের বাজারে যাতে কোনো ধরনের প্রভাব না পড়ে সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মামুনুর রহমান।