Sunday, May 12, 2024
Google search engine
Homeশিক্ষাভর্তি পরীক্ষা দিলেন ৭০০ শিক্ষার্থী, অসাধ্য সাধন করলেন অসীম

ভর্তি পরীক্ষা দিলেন ৭০০ শিক্ষার্থী, অসাধ্য সাধন করলেন অসীম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলছে। গত মঙ্গলবার (সি) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার চতুর্থ ও শেষ শিফটের নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর সাড়ে ৩টায়। পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশে রাবির ভর্তিচ্ছু ৭০০ শিক্ষার্থী মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ওঠেন।

আর শুরুতেই শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে ট্রেনটি। তাই নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ট্রেনটি রাজশাহীর উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। ট্রেনটি যথাসময়ে ছাড়লে রাজশাহী পৌঁছাতো বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে। পরীক্ষার্থীরা সহজেই দিতে পারতেন পরীক্ষা।

তবে নির্ধারিত সময়ের পরে ছাড়ায় তা পৌঁছানোর কথা দুপুর ৩টায়‌। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা ধরেই নিয়েছিলেন পরীক্ষা দিতে পারবেন না। কিন্তু একজন অসীম কুমার সেই অসাধ্যকে সাধন করেছেন। রাবি কর্তৃপক্ষ ও নিজের সাহসিকতায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসিয়েছেন।

এদিকে এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসীম কুমারকে ‘দ্য রেলওয়ে ম্যান’ উপাধি দিয়েছেন নেটিজেনরা। ঐ ট্রেনে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী অসীম কুমারকে সাহসী ও সৎ মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি পোস্ট দেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার।

তিনি লেখেন, প্রায় ৭০০ ছাত্র-ছাত্রীর ‘ধূমকেতু এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঢাকা থেকে রাজশাহীতে গিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা। রেল ব্রোকেনের জন্য ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকেই বিলম্বে রওনা হয়। সকাল ১১টায় হিসেব করে দেখা গেল, ট্রেনটি বিকেল ৩টা নাগাদ রাজশাহী পৌঁছুবে। তখন থেকেই কাজ শুরু করেন অসীম কুমার। পরীক্ষার্থীদের সময়ের ব্যাপারে চিন্তা করে ধূমকেতু এক্সপ্রেসকে এগিয়ে নিয়ে আসেন অন্য কয়েকটি ট্রেনকে বসিয়ে রেখে। কিন্তু বিধি বাম! লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধূমকেতুর ইঞ্জিন ফেইল করে। ফলে ট্রেনটির চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। কী করা যায়, কী করা যায়? ভাবছেন অসীম। এভাবে কি সমাপ্তি হবে শত শত পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন? যেই ভাবা, সেই কাজ। পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে শরৎনগরে থাকা ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির ইঞ্জিন কেটে এনে ধূমকেতু এক্সপ্রেসে প্রতিস্থাপন করা হয়। আবার চালু হয় ট্রেনটি। কিন্তু সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। ততোক্ষণে এক ঘণ্টার মতো ‘সময়’ নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে ট্রেনটি বিকেল ৪টায় রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছুবে। তখন তো পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে! পরীক্ষার্থীদের লালিত স্বপ্ন কি ধূলিসাৎ হয়ে যাবে? উপায়ান্তর না দেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে পরীক্ষার সময় পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান অসীম। ট্রেন ছুটছে, দুর্বার গতিতে ছুটছে। দুশ্চিন্তাও পিছু ছাড়ছে না– পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে তো শিক্ষার্থীরা? আন্তরিক যোগাযোগ রাখছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও। ফোন করে জেনে নিচ্ছেন ট্রেনের খবর। সময় বাঁচাতে আড়ানি স্টেশনের স্টপেজে ট্রেন না থামানোর নির্দেশ দেন অসীম কুমার। অবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছে বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে। ভিসির কাছে ‘লেট এন্ট্রি’র বিশেষ অনুরোধ করেছিলেন অসীম। পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলেও তাই শুধুমাত্র তাদের জন্য হলে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছিল আরও ২০ মিনিট।

অসীম কুমার জানান, যখন ঢাকা থেকে জানানো হলো ৭০০ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ঐ ট্রেনে আছে। তখনি আমি আমাদের কন্ট্রোল রুমে বিষয়টি অবহিত করি। যাতে ট্রেনটি সব স্টেশনে থামানো না হয়। উল্লাপাড়া স্টেশনে এসে ট্রেনটি ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে। পরে অন্য একটি ইঞ্জিন এনে ট্রেনটি সচল করা হয়। অন্যদিকে রাবি উপাচার্যের সঙ্গে আমি আটবার কথা বলেছি। যাতে শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়। এভাবে তাদের ৩.৩৮ মিনিট রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এদিকে বুধবার ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ক প্রেস বিফ্রিংয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, দুর্ভোগ বলে কয়ে আসে না। ইঞ্জিন নষ্ট হওয়ায় ঠিক সময়ে ট্রেনটি আসতে পারেনি। ঐ ট্রেনে মঙ্গলবারের ‘সি’ ইউনিটের চতুর্থ শিফটের ১২৫ জনের মতো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছিল। পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট পর পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে মানবিক বিবেচনায় তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments