জাতীয়

ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা, সতর্ক অবস্থানে পুলিশ

ঈদের আনন্দ পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। আর ফাঁকা ঢাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অপ্রত্যাশিত নয়। তাই যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় ঢাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। ফাঁকা ঢাকায় যেন ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো ঘটনা না ঘটে সে জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

রেড জোন চিহ্নিত করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে র‍্যাব। অন্যদিকে ডিএমপির পক্ষ থেকে স্পেশাল টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত বছর ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকায় একাধিক ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিল পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান তালুকদারের হত্যাকাণ্ড। গত ঈদুল আজহার ছুটির দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন পুলিশ সদস্য মনিরুজ্জামান। এছাড়া গত ঈদুল আজহার ছুটিতে রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাটে একটি বাসায় ঘটে দুর্র্ধষ ডাকাতির ঘটনা। সেই বাসার সবাইকে দিনের বেলায় জিম্মি করে ডাকাতরা লুট করে নিয়ে যায় স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা। এবারের ঈদেও এসব অপরাধ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

আরো জানা যায়, অন্য ঈদের ছুটির মতো এবারও রাজধানী ছেড়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। এর ফলে ঈদের ছুটিতে রাজধানী ঢাকা প্রায় ফাঁকা থাকবে। এ সুযোগে প্রতি বছরই অপরাধীদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। তাদের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয় ফাঁকা ঢাকার ফ্ল্যাট বাসা ও রাস্তার পথচারীরা। তাই এবারের ঈদের ছুটিতে যেন এসব অপরাধ না ঘটে, সে জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে ঈদের ছুটি শুরু হচ্ছে। সাপ্তাহিক ও ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলিয়ে এবার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে লম্বা ছুটি মিলছে। তাই ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য দলে দলে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আলাদা আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‍্যাব ও পুলিশ। রমজানজুড়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ বেড়ে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে নতুন করে নেয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া এরইমধ্যে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। অতীতের ঘটনা মাথায় রেখে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নতুন করে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ফাঁকা ঢাকায় থাকবে ডিএমপির স্পেশাল টিম

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতির মতো অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে ডিএমপির স্পেশাল টিম। ডিএমপির স্পেশাল টিম এলাকায় এলাকায় ঘুরে টহল দেবে এবং আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় সন্দেহজনক কারও চলাফেরা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ঈদের ছুটির সময় কাজ করে যাবে এই স্পেশাল টিম। এছাড়া ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে ডিএমপির ৫০টি থানাকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। মোবাইল টহল টিমের পাশাপাশি চেকপোস্ট জোরদার করা হবে। ফাঁকা ঢাকায় যেকোনো অপরাধ দমনে মাঠ পর্যায়ে থাকবে স্পেশাল টিম। এ ছাড়া বিশেষ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ডিএমপির প্রতিটি থানাকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

থানায় থানায় নির্দেশ

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে ডিএমপির ৫০টি থানাকে ডিএমপি সদর দফতর থেকে বিশেষ নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে ডিএমপির সদর দফতরে। এসব সভায় ডিএমপির ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফাঁকা ঢাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়, ঈদের ছুটির কয়েক দিন আগে থেকে এবং ঈদের ছুটির কয়েক দিন পর পর্যন্ত টহল ও চেকপোস্ট জোরদার করতে হবে। এছাড়া প্রতিটি থানাধীন এলাকায় রাতে ও দিনে টহল দিতে হবে।

এ বিষয়ে ডিএমপির হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ফাঁকা ঢাকায় নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি সদর দফতর থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে নিরাপত্তা দিতে অন্য সময়ের তুলনায় আমাদের তৎপরতা বেশি থাকবে। ছুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য আমাদের পেট্রোলিং ব্যবস্থা এরইমধ্যে জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া দিনেরাতে চেকপোস্ট থাকবে আমাদের। অপরাধীরা যাতে ঢাকায় অপরাধ করে বের হয়ে যেতে না পারে এবং অপরাধীরা যাতে ঢাকায় প্রবেশ না করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিএম ফরমান আলী বলেন, ফাঁকা ঢাকায় পুলিশ প্রতিবারই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এবারও আমাদের ডিএমপি সদর দফতর থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী এরই মধ্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মানুষ বাড়িতে যাবে, তাদের বাসাবাড়ি পাহারা দিতে আমাদের বিশেষ টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে।

রেড জোনে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে র‍্যাব

ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা দিতে পুলিশের পাশাপাশি বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‍্যাবও। গোয়েন্দা দল, চেকপোস্ট, রোবাস্ট পেট্রোল ও টহল টিমের পাশাপাশি কিছু এলাকার জন্য স্পেশাল টিম এরইমধ্যে প্রস্তুত রেখেছে র‍্যাব। এছাড়া রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকাকে অপরাধের জন্য রেডজোন চিহ্নিত করে এসব এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে র‍্যাব।

সোমবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নাড়ির টানে ঢাকা শহরের অনেক বাসিন্দা গ্রামে চলে যান। শূন্য ঢাকার নিরাপত্তার দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের ওপর বর্তায়। কোনো এলাকায় যদি কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় তা আমরা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পারি আর তখন আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকাকে আমরা রেড জোন হিসেবে দেখছি। যেখানে চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেশি ঘটে। এসব রেড জোনে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি।

এদিকে গত রোববার দুপুরে সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়ি যাবেন। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা বাড়িতে কেউ যাতে অপরাধ সংঘটিত করতে না পারে সে জন্য আপনারা ফ্ল্যাট বাড়ির নিরাপত্তার জন্য পাহারাদার নিয়োজিত করবেন। অনেক সময় দেখা যায়, অপরাধ সংঘটিত হলে সিসিটিভির ক্যামেরা অন্যদিকে মুখ করে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরা ঠিক আছে কি না এবং যেদিকে মুখ করে থাকার কথা সেদিকে আছে কি না তা আপনারা চেক করে নেবেন। যাতে করে অপরাধ সংঘটিত হলে পাহারাদার না ধরতে পারলেও আমরা যেন গিয়ে অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারি।

ছিনতাই নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ঈদের সময় ছিনতাইকারীরা যেমন তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করে তেমনি আমরাও আমাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছি। ছিনতাই নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা কাজ করছি। প্রতিটি ছিনতাইয়ের অভিযোগের বিষয়ে আমরা যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ছিনতাইকারীদের আমরা আইনের আওতায় আনছি। অপরাধ করলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এর আগে শুক্রবার (৫ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ঢাকা ছাড়ার আগে নগরবাসীকে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো মধ্যে রয়েছে–

১। গ্যাসের ও পানির লাইনসহ সব ধরনের লাইট, ফ্যানের সুইচ, বৈদ্যুতিক প্লাগ বন্ধ করে বাসা থেকে বের হবেন। বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরে এসে দরজা-জানালা খুলবেন। ঘরে জমে থাকা গ্যাস বের না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই গ্যাসের চুলা জ্বালানো কিংবা বৈদ্যুতিক সুইচ অন করবেন না।

২। বাসাবাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে। পূর্বে বসানো সিসি ক্যামেরা সচল আছে কি না পরীক্ষা করতে হবে।

৩। বাসার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

৪। নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণালংকার ব্যাংক কিংবা নিকটাত্মীয়দের কাছে নিরাপদে রেখে যাবেন।

৫। রাতে কিংবা দিনে একসঙ্গে মুখে মাস্ক এবং মাথায় ক্যাপ পরিহিত অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি নজরদারি করতে হবে। প্রয়োজনে ৯৯৯ ফোন দিতে হবে।

৬। মোটরসাইকেল চুরি রোধে অ্যালার্ম লাগাতে হবে। এতে কেউ মোটরসাইকেল স্পর্শ করলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে। লক করার কাজে স্টিলের তৈরি মেরিন অ্যাংকর চেইন ব্যবহার করতে হবে। মোটরসাইকেলে জিপিএস ট্র্যাকার লাগাতে হবে এবং চাকাতে উন্নত মানের ডিস্ক লক ব্যবহার করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button