লোহিত সাগরে সংকট সত্ত্বেও নিম্নমুখী প্রবণতায় পণ্যবাজার
নতুন বার্তা ডেস্ক: লোহিত সাগরে চলমান সংঘাতে পণ্য পরিবহন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য বাণিজ্যে জাহাজ ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি। তবে এ সংকটের মধ্যেও নিম্নমুখী চাপে পড়েছে আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার। খবর দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন। বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় কমাচ্ছেন। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূরাজনৈতিক সংঘাতের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রয়েছে ঝুঁকির মুখে। এসব কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে চাহিদা, কমছে পণ্যের দাম।
পোর্টওয়াচের দেয়া তথ্যমতে, লোহিত ও এডেন সাগরকে সংযোগকারী বাব-এল-মনদেব প্রণালি দিয়ে কার্গো ও ট্যাঙ্কার চলাচল প্রায় ৫৫ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইকোনমি কমিশনার জানান, লোহিত সাগর দিয়ে এশিয়া থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ৪০০ শতাংশ। নির্ধারিত গন্তব্যে পণ্য পৌঁছতে অতিরিক্ত ১০-১৫ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে পণ্যের সরবরাহ সংকট তীব্র আকার ধারণ করার পাশাপাশি দাম আকাশচুম্বী হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এর বিপরীত চিত্র।
লোহিত সাগরে সৃষ্ট সংকটের কারণে পণ্যের দাম সাময়িকভাবে বাড়লেও গত অক্টোবরের পর থেকে জানুয়ারির শেষ নাগাদ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। গবেষণা সংস্থা বিএমআইয়ের (ফিচ সলিউশনের একটি ইউনিট) তথ্যমতে, গত বছরের অক্টোবরে হামাস-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর থেকে গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক কমেছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পণ্য উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় অঞ্চল নয় মধ্যপ্রাচ্য। তাই এখানে সংঘাতের ফলে সরবরাহে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে না বললেই চলে। সংঘাতের ফলে শুধু পণ্যের পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।
ডাচ বহুজাতিক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান আইএনজি জানায়, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনা পণ্যবাজারের জন্য আরো বেশি ঝুঁকি বয়ে আনবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাজুক জ্বালানি তেলের বাজার। তবে এখন পর্যন্ত সরবরাহ নিয়ে বড় কোনো উৎকণ্ঠা নেই বলেও জানিয়েছে থিংক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠানটি।
বিএমআই জানায়, লোহিত সাগর দিয়ে পণ্য পরিবহন সীমিত হয়ে গেলেই যে পণ্যের সরবরাহ বড় ধরনের বাধার মুখে পড়ত, তা নয়। এ রুটে সংঘাতের কারণে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা হলো ঊর্ধ্বমুখী ব্যয় ও পণ্য পৌঁছতে দেরি হওয়া। তবে দুর্বল চাহিদার কারণে এসব বিষয় পণ্যের দামে বড় কোনো প্রভাব তৈরি করতে পারবে না।
সংস্থাটি আরো জানায়, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পণ্যবাজারের জন্য চ্যালেঞ্জিংই থাকবে। চলতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার থাকবে শ্লথ, যা পণ্যবাজারে নিম্নমুখী চাপ তৈরি করবে। বিশেষ করে জ্বালানি ও শিল্প ধাতুর দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমতে পারে। অন্যদিকে চীনের অর্থনীতিতে ধীরগতি ধাতব পণ্যের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছর খাদ্যপণ্যের গড় দাম নিম্নমুখী থাকবে। কারণ প্রধান প্রধান উৎপাদক দেশগুলোয় এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। তাছাড়া লোহিত সাগরে সংঘাতের কারণে এসব পণ্যের বাণিজ্যও বড় পরিসরে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা নেই। অন্যদিকে এ বছর জ্বালানি তেলে চাহিদা প্রবৃদ্ধির গতি গত বছরের তুলনায় ধীর থাকবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা। ফলে পণ্যটির গড় দাম ৭০-৮০ ডলারের মধ্যেই ওঠানামা করবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।