মুক্তকথা

বুলিং— একটা সামাজিক ব‍্যাধি

“বুলিং” শব্দটা আমি প্রথম শুনি গত বছর, আমার আট বছরের নাতনি আমায়রার মুখে। সত‍্যি বলতে, শব্দটার অর্থ তখন পর্যন্ত জানতাম না। একদিন সে তার মাকে বলছিল, স্কুল বাসে কে যেন তার সঙ্গে বুলিং করে। তখন তার মা তাকে বললো, ওসব বুলিং-এর সে যেন কোন গুরুত্ব না দেয়। কিছু ছেলেমেয়ে থাকে যারা বুলিং করে আনন্দ পায়। এই বছর কিছুদিন আগে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী অবন্তিকা যখন আত্মহত্যা করলো, তার আত্মহত্যার পেছনের কারণ খুঁজতে যেয়ে দেখি, সেও সেই বুলিং-এর স্বীকার হয়েছিল। এবং হয়েছিল মারাত্মকভাবে। অবন্তিকার মায়ের একটা সাক্ষাতকার দেখে বিষয়টা পরিষ্কার হলো।

বুলিং বলতে মানুষকে মানসিক যন্ত্রণায় দগ্ধ করা ছাড়াও যৌন হয়রানি হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের বুলিং। বিষয়টা যে কী ভীষণ ভয়াবহ সেটা যারা বুলিং-এর স্বীকার হয় শুধু সেই ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারে।

এরপর খুব সম্প্রতি আরেকটা কেস দেখলাম, সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্রী কাজী ফারজানা মীমের ক্ষেত্রে। এবারের বুলিং ছাত্রদের পক্ষ থেকে না, রীতিমতো শিক্ষকের জায়গা থেকে হয়েছে। যেহেতু সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ফিল্ম স্টাডি বিষয়ের শিক্ষক আবু শাহেদ ইমনের (ইনি আবার চ‍্যানেল আইরের বীবপঁঃরাব ঢ়ৎড়ফঁপবৎ) বাজে প্রস্তাবে মীম সাড়া দেয় নাই, শুরু হলো তাকে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দেয়ার পালা।

ক্লাসের মধ‍্যইে তাকে নানাভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা শুরু করে। তবে মীম অবন্তিকার চেয়ে হয়তো কিছুটা সাহসী, তাই সে বিষয়টা তার বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে অবগত করে। এতে ফলাফল অবশ‍্য আরো খারাপের দিকে যায়। বিভাগীয় চেয়ারম্যান মীমের পক্ষ ছেড়ে শিক্ষকের পক্ষ নেয়। মীম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে লিখিত নালিশ করে তখন সেই নালিশ তুলে ফেলার জন‍্যে সেই শিক্ষকসহ বিভাগের চেয়ারম্যান চাপ প্রয়োগ তো করতেই থাকে, পাশাপাশি সেই শিক্ষক ইমন মীমকে তার বিষয়ে ফেইল করিয়ে দেয়। শুধু সেখানেই বিষয়টা শেষ হয় না, মীমকে নানাভাবে ভয়ভীতিসহ তাকে অনার্স পাশে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে মীমের সহপাঠীরা মাস্টার্স দিয়ে ফেললেও, মীমের অনার্স পাশ বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই বুঝতে অসুবিধা হয় না, বুলিং কোন্ পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেছে। ২০১৭-১৮ সালে ভর্তি হলেও, এই বুলিং-এর শিকার মীম এখনো অনার্স পাস করতে পারে নাই। মেয়েটার ভবিষ্যত তো শেষ করা হচ্ছেই, তার সাক্ষাতকার দেখে যেটা বুঝলাম, এখন মীম তার জীবননাশেরও ভয়ে আতংকিত হয়ে দিন কাটাচ্ছে।

সব খবর আমরা পাই না। অবন্তিকা, মীমের মতো আরো কত কত অবন্তিকা আর মীম যে সমাজে ছড়িয়ে আছে জানা নাই। কারণ এসব বুলিং জগন্নাথ ছাড়াও আরো বিদ‍্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে চলেছে। উন্নত দেশে ছোটখাটো বুলিং-এর কারণেই পুলিশ কেস হয়ে থাকে। আর আমরা অবন্তিকা বা মীমের মতো ভয়ানক সব বুলিং দেখেও না দেখার ভান করি। এটা যে কত বড় একটা সামাজিক ব‍্যাধিতে রূপ নিচ্ছে সেটা আরো কিছু অবন্তিকার মতো আরো কিছু আত্মহত্যা দেখে কি বিষয়টা উপলব্ধি করবো? প্রশ্নটা রেখেই লেখাটা শেষ করলাম।

লেখিকা – ফ্লোরা সরকার (তার ফেসবুক পোস্ট হতে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button