Saturday, May 11, 2024
Google search engine
Homeআন্তর্জাতিকসেই রোহিঙ্গাদেরই এখন সাহায্য চায় মিয়ানমারের জান্তা

সেই রোহিঙ্গাদেরই এখন সাহায্য চায় মিয়ানমারের জান্তা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গাকে হত্যা করার প্রায় সাত বছর পার হয়ে গেছে। জাতিসংঘ এই হত্যাযজ্ঞকে জাতিগত নিধনের উদাহরণ বলে অভিহিত করেছে। এবার সেই রোহিঙ্গাদের কাছেই সাহায্য চাইছে তারা।

রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার থেকে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানতে পেরেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর পক্ষে লড়ায়ের জন্য জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছে।

বিবিসি যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তাদের নাম নিরাপত্তার কারণে পরিবর্তন করেছে। ৩১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ। তার তিনটি সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার ভয় করছিল কিন্তু আমাকে যেতে হয়েছিল।’

তিনি রাখাইনের রাজধানী সিত্তওয়ের কাছে বাও দু ফা ক্যাম্পে থাকেন। অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা গত এক দশক ধরে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত আইডিপি ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হয়েছে।

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে গভীর রাতে বাও দু ফা ক্যাম্পের নেতা তার কাছে আসেন বলে মোহাম্মদ জানান। এবং তাকে বলেন, তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

এটা সেনাবাহিনীর আদেশ। মোহাম্মদ আরো বলেন, ‘আমি যদি সেনা বাহিনীতে যোগদানে অস্বীকার করি, তাহলে আমার পরিবারের ক্ষতি করা হবে বলে তারা জানায়।’ বিবিসি বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে। তারা নিশ্চিত করেছে যে, সেনা কর্মকর্তারা ক্যাম্পের চারপাশে ঘুরছেন এবং তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন।

মোহাম্মদের মতো রোহিঙ্গা পুরুষদের জন্য চরম পরিহাসের বিষয় হলো, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এখনো নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত।

তারা নানা ধরনের বৈষম্যমূলক বিধিনিষেধের শিকার তারা নিজ সম্প্রদায়ভুক্ত এলাকার বাইরে যাওয়া-আসা করতে পারেন না।

২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যের মিশ্র সম্প্রদায় থেকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তাদের ক্যাম্পে বসবাস করতে বাধ্য করা হয়েছিল। এর পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালের আগস্টে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ৭ লাখ রোহিঙ্গা ওই সময় প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এদের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ এখনও বাংলাদেশে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক আচরণের জন্য মিয়ানমার এখন হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি কাছে রাখাইনে বিশাল এলাকা হারিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরপরেই রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক নিয়োগ দিচ্ছে তারা। যদিও রাখাইনে সেনাবাহিনীর কামান ও বিমান হামলায় অনেক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনী এখন দেশের অন্যান্য স্থানেও বিরোধী বাহিনীর হামলা ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সংঘর্ষে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী বিপুল সংখ্যক সেনা হারিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে, আত্মসমর্পণ করেছে বা দলত্যাগ করেছে। ফলে সেনাবাহিনীতে সেনার ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

মিয়ানমারের খুব কম লোকই এখন জান্তা সরকারের জন্য নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিতে আগ্রহী। রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছে, এ কারণেই তাদের আবার টার্গেট করা হচ্ছে। মোহাম্মদ বলেন, তাকে সিত্তওয়েতে ২৭০ তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের শহরে বসবাস করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মোহাম্মদ আরো বলেন, ‘আমাদের শেখানো হয়েছিল কীভাবে বুলেট লোড করতে হয় এবং গুলি করতে হয়।’ আরেক রোহিঙ্গা দলের একটি ভিডিও দেখেছে বিবিসি। ভিডিওতে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের বিএ–৬৩ রাইফেল চালানো শেখানো হচ্ছে।

মোহাম্মদকে দুই সপ্তাহের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর তাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুই দিন না যেতেই তাকে আবার ডাকা হয়। ২৫০ জন সেনার সঙ্গে একটি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে তিনটি সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণের জন্য আরাকান সেনাবাহিনীর সঙ্গে তখন ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছিল।

মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি জানতাম না কেন আমি যুদ্ধ করছি। যখন তারা আমাকে একটি রাখাইন গ্রামে গুলি করতে বলে, আমি গুলি করলাম।’ ১১ দিন যুদ্ধ করেছিলেন মোহাম্মদ। যুদ্ধে সেনাবাহিনীতে জোর করে নিযুক্ত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাকে নিহত হতে দেখেছেন। মোহাম্মদ নিজেও আহত হয়েছিলেন। তার দুই পায়ে গোলা বা গুলির আঘাত লাগে। ফলে তাকে চিকিৎসার জন্য সিত্তওয়েতে ফিরিয়ে আনা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার ক্যাম্পে ফিরে যান মোহাম্মদ।

গত ২০ মার্চ যুদ্ধের একাধিক ছবি প্রকাশ করে আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছে থেকে তিনটি ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সেই ছবি প্রকাশ করেছিল তারা। ছবিতে বেশ কয়েকটি লাশের মধ্যে অন্তত তিনজন রোহিঙ্গা ছিলেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের জান্তা বাহিনীতে যোগদানের নির্দেশের বিষয়টি অস্বীকার করছে জান্তা সরকার। জান্তার মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুন বিবিসিকে বলেন, ‘তাদের সামনের সারিতে পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তাই তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা যাতে নিজেরাই করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাইছি।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments