‘সাময়িক’ বন্ধ হওয়া ওমানের শ্রমবাজারের জট খোলেনি চার মাসেও
বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান। দেশটিতে বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। কিন্তু বাংলাদেশি শ্রমিক যাওয়ার ওপর ‘হঠাৎ স্থগিতাদেশ’ দেয় সেদেশের সরকার। এ ঘটনার চার মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজারের জট খোলেনি। এখন পর্যন্ত ভিসা ইস্যু হয়নি কোনো বাংলাদেশির।
যদিও স্থগিত দেওয়ার সময় ওমানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল এটি ‘সাময়িক’।
এদিকে জনশক্তি রফতানির সঙ্গে সম্পৃত্তরা বলছেন, ওমানের শ্রমবাজারটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই মার্কেটটি খোলার ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের তৎপরতা তারা দেখা যায়নি।
গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা বন্ধের ঘোষণা দেয় ওমান সরকার। রয়্যাল ওমান পুলিশ (আরওপি) এর পক্ষ থেকে বলা হয়, সব শ্রেণির বাংলাদেশি নাগরিকদের নতুন ভিসা ইস্যু স্থগিত কার্যকর হবে। ওমানে টুরিস্ট ও ভিজিট ভিসায় আসা প্রবাসীদের ভিসা পরিবর্তন করার সুযোগও একইসঙ্গে স্থগিত থাকবে।
রয়্যাল পুলিশের এক বিবৃতিতে এই প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, নীতি পর্যালোচনার আওতায় ওমানে আসা সব দেশের নাগরিকদের জন্য (আরওপি) সব ধরনের টুরিস্ট ও ভিজিট ভিসার পরিবর্তন স্থগিত করছে।
এই সিদ্ধান্তের আগে, প্রবাসীরা ভিজিট ভিসায় ওমানে প্রবেশ করে পরে তা কর্মসংস্থান ভিসায় রূপান্তর করতে পারতেন।
নতুন আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার ওমান দূতাবাস থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, ওমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের মূল্যায়ন করার পাশাপাশি বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবদানকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে।
এমন ঘোষণা আসার পর বাংলাদেশের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করেই এসেছে। এটা খুবই সাময়িক। আমরা আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি— আলোচনার মাধ্যমে খুব শিগগির এর সমাধান হবে।
এই ঘোষণার পর চার মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে।
একইভাবে ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসও এই সিদ্ধান্তকে ঐ সময় ‘অস্থায়ী’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
এদিকে, ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের কাউন্সিলর মো. রফিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি রাষ্ট্রদূতের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মিশন ও কল্যাণ) মো. সাজ্জাদ হোসেন ভূঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আসলে এই বিষয়টি আমার দফতর থেকে নয়, কর্মসংস্থান শাখা থেকে দেখেন।
শ্রমবাজার বন্ধের বিষয়ে ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক না আনার বিষয়টি সম্পূর্ণ ওমান সরকারের নিজস্ব পলিসি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে শ্রমবাজারটি খোলার জন্য।
শ্রমবাজার বন্ধ থাকার মধ্যেও ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে ৫৬ জন নারীশ্রমিক ওমানে গিয়েছেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে ঐ কর্মকর্তা বলেন, মূলত ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সব ধরনের ভিসা ইস্যু হয়েছে। সেই হিসাবে যেসব নারী কর্মী এসেছেন সেগুলো তিন মাসের মধ্যে আসতে পারেন। কারণ তাদের ঐ সময় থেকে পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত ভিসার (জানুয়ারি) মেয়াদ ছিল।
শ্রমবাজার বন্ধের আগে ২০২৩ সালেই ওমানে এক লাখ ২৭ হাজার ৮৮৩ জন শ্রমিক পাড়ি জমিয়েছিলেন। বর্তমানে দেশটিতে মোট বাংলাদেশির সংখ্যা সাত লাখ তিন হাজার ৮৪০ জন। বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম এই শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় সরকার প্রচুর রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।