ফিচার

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখির বাসা

একটা সময় গ্রাম-বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে বা মাঠের পাড়ে দেখা মিলতো সারি সারি তালগাছের, সেখানে সাদা চঞ্চল নিষ্ঠাবান বুনন শিল্পী পাখির বাসা সবার নজর কাড়ত। সেই চিরচেনা তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা দুটোই আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তেমনি হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক শিল্পীর পাখি ভোরবেলা কিচিরমিচির মধুর সুরে ডাকাডাকি।

ছোটবেলা থেকে গ্রামে বেড়ে উঠা একজন মানুষের গ্রামীণ প্রকৃতি ও চড়ুই পাখির ডাকাডাকিতে প্রশান্তি পায় মন তাই, খুব সহজে ভুলতে পারেনা এমন দৃশ্য। গ্রাম ও গ্রামীণ জীবনে চিরচেনা রূপের মধ্যে বাবুই পাখির বাসাও অন্যতম। ছোটদের কবিতার বইয়ে স্থান পাওয়া ছোট্ট কবিতাটির প্রতিফলন যেন বাবুই পাখির বাসা।

বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,

কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই।

আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে

তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে’,

বাবুই পাখিকে নিয়ে কবি রজনীকান্ত সেনের লেখা একটি কবিতার এই শব্দ চয়নগুলি বাবুই পাখির জীবনযুদ্ধের জয়গানকেই নির্দেশ করে।

স্বল্প বা ঝড়ো বৃষ্টির দিনে নিরাপদে নিজ বাসায় থাকে এই পাখি। লাগামহীন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃদ্ধির হালকা হাওয়াই দোল খায় উঁচু তালগাছে ঝুলে থাকা বাবুই পাখির বাসা দেখতে খুবই সুন্দর লাগে, তবে এরকম দৃশ্যপট খোলা জানালা দিয়ে দেখতে কি দারুণ লাগত এখন এইসব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা মেলে না গ্রামীণ পরিবেশে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী নিপুণ কারিগর বাবুই পাখি ও তাদের বাসা।

বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত। আশ্চর্যের বিষয় হলো- আবহাওয়া তারতম্য ভাসমান রক্ষার জন্য বাসার ভিতরে থাকে কাঁদা আর গোবরের প্রলেপ বাসার ভিতরে ঠিক মাঝখানে একটি আরা তৈরি করে থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রাম বাংলা থেকে দিন দিন তালের গাছ উজাড় করে বিভিন্ন ইট ভাটায় দেয়া হচ্ছে ,কৃষি কাজে ব্যাপক কীটনাশকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাবুই পাখিসহ অন্যান্য পাখিরা মাঠে পড়ে থাকা খাদ্যশস্য খেয়ে মারা যায়। কীটনাশক ছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের অভাব তো রয়েছে। ফলে বিলীন হচ্ছে বাবুই পাখি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button